হিংসা ও ঘৃণার পরিনতি কী হয়

আমরা যখন আমাদের শত্রুদের ঘৃণা করি তখন তারা মানসিক দিক দিয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷ আমাদের ঘুম, হজমশক্তি, ব্লাড প্রেসার, স্বাস্থ্য আর আমাদের সুখের উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ আমাদের শত্রুরা যদি জানতে পারত তারা কিভাবে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে ক্ষতি করে চলেছে তাহলে তারা আনন্দে নাচতে থাকতাে৷ 

আরো পড়ুনঃ- কী কারনে মানুষ পাগল হয়

আমাদের ঘৃণা তাদের কোনই ক্ষতি করে না বরং সে ঘৃণা আমাদেরই দিনরাতকে নরক করে তােলে৷ এই কথাটা কে বলেছিলেন জানেন? স্বার্থপরেরা যদি আপনাদের উপর টেক্কা দিতে চায় তাহলে তাদের তুচ্ছ জ্ঞান করে বাতিল করুন, শােধ নেবার দরকার নেই৷ যখন শােধ নেবার চেষ্টা করবেন, জানবেন তার ক্ষতি করার চেয়ে নিজেরই বেশি ক্ষতি করবেন৷ কথাটা শুনে মনে হয় কোন বিখ্যাত আদর্শবাদীর উক্তি৷ কিন্তু তা নয়৷ কথাটা মিলওয়াকির পুলিশ দপ্তরের এক বুলেটিণে বের হয়৷ শােধ নেবার চেষ্টা কিভাবে আপনার ক্ষতি করতে পারে? 

নানা ভাবেই তা পারে৷ লাইফ পত্রিকার ভাষা অনুযায়ী এতে আপনার স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে৷ ব্যক্তিত্বময় রক্তচাপ সম্পন্ন মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঘৃণা৷ যখন ঘৃণা দীর্ঘকালীন হয় তখন সঙ্গী হয় দীর্ঘকালের রক্তচাপ আর হার্টের অসুখ৷ ডাক্তাররা জানেন আপনার যদি হৃদপিণ্ড দুর্বল থাকে তাহলে হঠাৎ রাগ আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে৷ 

এই রাগ সত্যিই একজন রেস্তোরাঁ মালিকের মৃত্যুর কারণ হয়৷ এটা ঘটে কবছর আগে ওয়াশিংটনের স্পােকেনে৷ ক’ বছর আগে স্পােকেনের এক রেস্তোরাঁর মালিক আটষট্টি বছরের মিঃ উইলিয়াম থডেবার রেস্তোরাঁর পাচকের উপর খুব ক্ষুব্ধ হন৷ এমনই তার রাগ হয় রিভলবার বের করে তিনি পাচককে তারা করেন আর তৎক্ষণাৎ পড়ে গিয়ে হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান - হাতে তখনও রিভলবারটা ধরা৷ 

আরো পড়ুনঃ- দুশ্চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ

করােনারের বক্তব্য ছিল প্রচণ্ড রাগের ফলে হৃদরােগে মৃত্যু৷ কি করে আমরা চেহারা ভালাে রাখতে পারি৷ আমি বা আপনি জানি, যেসব মেয়েদের মুখ কুচকে গেছে বা চেহারা শুকিয়ে গেছে তা ঘৃণারই পরিনতি৷ পৃথিবীর সবরকম চিকিৎসাতেও এটা ভালাে হবে না৷ কিন্তু ক্ষমা, নমনীয়তা আর প্রেমে তাদের চেহারার উন্নতি হতে পারে৷ 

ঘৃণা আমাদের খাদ্যকেও বিস্বাদ করে তােলে৷ আমাদের শত্রুরা যদি জানতে পারে তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা আমাদের কিভাবে শেষ করে ফেলছে, নার্ভাস করছে আর সৌন্দর্য নষ্ট করছে, হৃদরােগ আনছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে জীবনীশক্তি নিঃশেষ করছে তাহলে তারা আনন্দে লাফাত৷ আমরা যদি শত্রুদের ভালবাসতে নাও পারি অন্ততঃ নিজেদের ভালােবাসি আসুন৷ 

নিজেদের এমনভাবে ভালবাসতে হবে যে কিছুতেই আমরা আমাদের সুখ, স্বাস্থ্য বা চেহারা নষ্ট করতে দেব না৷ শেক্সপিয়ার যেমন বলেছিলেনঃ ‘শত্রুর জন্য এমন উত্তাপ সৃষ্টি করবেন না যাতে নিজেই দগ্ধ হবেন৷ আমরা হয়তাে আমাদের শত্রুদের ভালবাসার মত অতখানি সাধু হতে পারব না, তবে আমাদের স্বাস্থ্য আর সুখের জন্য আসুন তাদের ক্ষমা করে সব ভুলে যাই৷ এটা একটা চমৎকার কাজ৷ 

আরো পড়ুনঃ- জীবনে ব্যার্থতার ৩০ টি কারন

কনফুসিয়াস বলেছিলেনঃ “অন্যায় নিগ্রহ বা লুণ্ঠিত হওয়া কিছুই হয় নি, যদি তা মনে রাখি৷ একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে “যে লােক রাগতে জানে না সে মূর্খ, কিন্তু যে রাগ করে না সে বুদ্ধিমান৷ শত্রুদের ক্ষমা করা আর ভুলতে পারার একটা পথ হল, আমাদের সবচাইতেও বড় কিছু করায় শপথ গ্রহন করা৷ তাহলে আমরা অপমান ও শক্রতার কথা ভুলে যাব আর আমাদের কাজই আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠবে৷ 

কখনই শত্রুদের উপর প্রতিশােধ নেবার চেষ্টা করবেন না, তাতে তাদের ক্ষতি করার চেয়ে নিজেরই ক্ষতি হয় বেশি৷ বরং জেনারেল আইসেনহাওয়ার যা করতেন তাই করা ভালঃ যাদের পছন্দ করি না তাদের নিয়ে যেন এক মিনিটও ভেবে সময় নষ্ট না করি৷